মায়াবতী_বউ
---এই তুমি কি করছো ছাড়ো বলছি ।
---আরে তুমি কি অন্ধ নাকি । যে চোখে দেখতে পাও না নাকি ।
---হ্যা আমি অন্ধ । তুমি ছাড়ো বলছি ।
---আরে নিজের বর কে এরকম করে কেউ বকে নাকি ।
---আহারে আমার বররে । বৃষ্টিতে ভিজে রাতে জ্বর এনে । এখানে এসে ফাজলামি করা হহচ্ছে । যাও ওই Chemistry ম্যাডামের কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরো । এখানে এসে আমাকে না ।
---ইমমম বউ তো আমার হেব্বি রাগ করেছে ।
---এই ওই পচা মার্কা মুখে বউ বলবা না বলে দিলাম হু ।
---বারে বউকে বউ বলবো না কি বলবো । আরে সে তো আমার ডিপার্টমেন্টের ম্যাডাম । সে যদি অসুস্থ হয়ে প.....
---তাহলে তো প্রতিদিনকার মতো কয়েক দিন সে মুখখানা দেখা যাবে না । অনেক কষ্টে ক্লাস নিতে হবে । নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্যে স্কুলে থাকতে হবে তাই না ।
---নাউুঁজুবিল্লাহ , ওস্তাগফিরুল্লাহ । তুমি এটা কি কউ বউ । ও তো তোমার বা...
---বান্ধবী না বলো সতিন ।
---ওস্তাগফিরুল্লাহ । এটা কি কউ । বান্ধবীকে কেউ সতিন বলে ।
---ওই সতিন বলে না কি বলে হু । যে বান্ধবী তার বান্ধবীর বরের সাথে হেসে হেসে কথা বলে । মাঝে মাঝে ফোন করে বলে তোর বর কি করে রে একটু ফোনটা দেতো কথা বলি । কার বান্ধবীদের বরকে বলে এসব হু । যাও ছাড়ো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ।
---বউ এটা বলতে নেই । ওতো আমাকে পারমালিটি দুলাভাই ডাকে ।
---ওই তুমি কি আমার চায়তে বেশি চেনো নাকি হু । ১০ বছর এক সাথে বড় হয়েছি । আমার চাইতে বেশি চেনো না ওকে । বদের হাড্ডি একাবারে । আর একটু যদি ধেরি করতো না তাহলে ওরে যে কি করতাম তুমি ভাবতে পারতে না ।
---ওই তোমার আজ কি হয়েছে শুনি । সেই সকাল থেকে দেখছি হাইটেম্পার হয়ে আছো ।
---আমি হাইটেম্পার তাই না । ছাড়ো বলছি আমাকে নাহলে আম্মাকে ডাক দিবো ।
---আমি কি মামনিকে দেখে ভয় পাই নাকি হু । ডাকো মামনিরে ডাকো ।
---ওকে । আম্মা.....আম্মা.....আম্মা....
.
রুমের ভেতর থেকে মামনি বলে উঠলো ,
---কি হয়েছে মা ।
---আপনি একটু এখানে আসেন তো ।
---কেনো ? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ।
---না আম্মা । একটু তাড়াতাড়ি আসেন ।
---ওকে আমি আসছি ।
.
আমি দোলাকে ছেড়ে দিলাম ।
একটু ইচ্ছে ছিলো সিনেমার মতো নায়ক সেজে বউকে জরিয়ে ধরবো । কিন্তু তা না কাল সন্ধ্যায় সময় একটু ভিজেছি বলে রাতে প্রচুর পরিমাণ জ্বর এসেছিলো । সারা রাত ঘুম পারে নি । শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে দেখি দোলা জিমাচ্ছে । থাক সে কথা পরে বলবো ।
আমি রুমের দিকে যাওয়ার পস্তুতি নিচ্ছি ।
---এই তুমি পালাবে না কিন্তু । না হলে ।
---না হলে কি ।
---না হলে কি সেটা আম্মা আসার পর বুঝতে পারবা ।
---আরে তুমি না একটু ইয়ে বোঝোনা ।
---ইয়ে বোঝাচ্ছি ধারাও ... এই একদম দৌড় দিবেন না ।
.
আমি কিচেন থেকে সোজা রুমের দিকে দৌড় দিলাম ।
যে কড়া মহিলা রে বাবা । আব্বুকে যে বোকে না তার কোনো শেষ নেই ।
.
আমি রুমে চলে এলাম । যাক বাবা বেঁচে গেলাম । এবার একটু কান খারা করে শুনি দেখি কি বলে দুজন ।
আমি দুজনের কথা শোনার জন্য পস্তুত আছি ।
কি বেপার আজ এতো ধিরে ধিরে কথা বলছে শোনা যাচ্ছে না । মানেটা কি ?
আমি রুম থেকে বের হয়ে কিচের দিকে রওনা দিলাম । গুটি গুটি পা টিপে টিপে ফেলছি জেনো বুঝতে না পারে ।
আমি কিচের পাশে দাড়িয়ে আছি । আমি দোলার আর মামনির কথা শুনতে লাগলাম ।
---আম্মা আপনি বিশ্বাস করেন নাসির আমাকে দিস্টার্ব করে নাই ।
.
তাহলে মামনি আমাকে সন্দেহ করছে ।
---তাহলে যে দৌড় দিতে দেখলাম বাদরটাকে ।
---ওতো ঔষুধ খুঁজে পাচ্ছিলোনা তাই এখানে এসে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো ।
.
যাক বাবা বউ তাহলে আমাকে মামনির বকা খাওয়া থেকে বাঁচালো । তাহলে একটা ইয়ে বেশি দিতে হবে ।
---শোন মা আজকে তুমি মিথ্যে বলে এড়িয়ে যাচ্ছো । কিন্তু আমি যদি হাতে নাতে ধরতে পারি না তাহলে মাস্টার গিরি শিক্ষা দিবো ।
.
এমা তুমি কি বউ পেয়ে আমাকে সতিনের ছেলের মতো ভালোবাসা শুরু করলে ।
---আম্মা আপনি যে কি বলেন । মিথ্যে বলবো কেনো । ওকে তো আমি বকা না খাওয়ালে ভালো লাগবেনা ।
---আচ্ছা তুমি রান্না করো আমি বাদরটাকে ঔষুধ খায়ে দিয়ে আসি ।
.
খায়ছে আমারে বেটি বলেটা কি । আমাকে ঔষুধ খায়ে দিবে ।
আমি দৌড় দিবো রুমের দিকে তখন বউ এর কথায় একটু শান্তি পেলাম ।
---আম্মা আপনাকে কষ্ট করে ঔষুধ খায়ে দিতে হবে না । আপনি শুধু এই শসা গুলি ধৌত করেন । আমি খায়ে দিয়ে আসছি ।
.
যাক বাবা বউ তাহলে ম্যানেজ করে নিলো সব
। এখানে আর কিছু শুনতে হবেনা । আমি গিয়ে রুমে বসে থাকি ।
.
আমি ওখান থেকে রুমে চলে এলাম ।
ভাবছি দোলা মেয়েটা খুব ভালো । প্রথমে তো বিয়ে করতে ইচ্ছুক ছিলো না । তবুও মামনির জর্জরিতাতে করতে হলো । বিয়ে করেছি খুব ভালো হয়েছে । আদর যত্ন অভাব হয় না । দুষ্ট মেয়ে বলে কথা ।
দোলার কথা ভাবতে দরজার লাগানোর শব্দে দরজার দিকে তাকালাম । দোলা হঠাৎ করে দরজা আটকালো বেপারটা কি ।
মুখে একটু হাসি আবার দুষ্টুমির ছাপ । দোলা দরজা লাগিয়ে আমার দিকে আসছে ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ,
---এই তুমি দরজা লক করলে যে । মামনি কি মনে করবে ।
.
দোলা কথা না বলে আমার পাশে বসে পরলো ।
ভাবছি হঠাৎ কি হলো মেয়েটার । মামনি কিছু বলেছে নাকি । আরে মামনি কিছু বললে তো মুখে মিটি মিটি হাসি থাকতো না ।
আমি আবারও বললাম ,
---কিছু হয়েছে তোমার । মামনি কিছু বলেছে ।
.
দোলা তবুও কিছু বলছেনা । অদ্ভুত বেপার তো । হঠাৎ বউ বোবা হয়ে গেলো নাকি ।
কিছু বলতে যাবো তখন দোলা ডাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো । আর মিটি মিটি হাসছে ।
আমি কিছু বলছিনা শুধু দোলার কান্ডগুলি দেখছি ।
কি জেনো ভেবে দোলা আমার বুকের উপরে মাথাটা দিয়ে শুয়ে পরলো । বাব্বাহ্ এখন দেখছি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি ।
কিছুখন কেটে গেলো বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে থেকে ।
আমি কিছু করতে যাবো তখন মামনি ডাক দিলো ,
---মা এখন তোমার ঔষুধ খাওয়ানো হয় নাই ।
.
মামনির কথা শুনে দোলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো ,
---আম্মা ডাকছে । আমাকে ছেড়ে দাও ।
---আর একটু থাকোনা প্লিজ ।
.
দোলা কিছু না বলে আবার মাথাটা বুকের মাঝে গুজে রেখে দেয় ।
কিন্তু মামনি আবার ডাক দেয় ,
---মা এগুলি ধৌত করা হয়েছে এখন কি করবো বল ।
---আম্মা আমি আসছি.... এই আমাকে ছাড়ো আম্মা ডাকছে ।
.
আমি কিছু বললাম না । শুধু দোলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ।
অনেক অভিমানী মেয়ে একটা ।
---এই এভাবে না তাকিয়ে আমাকে যেতে দাও ।
---তোমাকে তো ধরে রাখি নি ।
---আরে রাগ করছো নাকি ।
---না । আর রাগ করবো কেনো । তোমার বা....
.
কথা শেষ না করার আগে পেয়ে গেলাম আমার চাওয়াটা ।
---এখন আমি যাই ।
---ওকে ।
.
মামনি আবার ডেকে উঠলো ,
---কি রে মা তোর এতো সময় লাগে নাকি ঔষুধ খাওয়াতে ।
---আম্মা এটা সে ঔষুধ না ।
---কি বললে শুনতে পাই নি মা ।
---কিছু না আম্মা ।
---তাড়াতাড়ি আয় তো ।
---ঠিক আছে আসতেছি ।
.
দোলা বুকের উপর থেকে দরজার কাছে যেতে লাগলো ।
আমিও উঠে দারালাম ।
দরজার খুলে পা বারাতে আমি বলে উঠলাম ,
---দোলা ।
.
দোলা দাড়িয়ে গেলো ।
আমার দিকে একবার তাকালো ।
---কিছু বলবে ।
---হ্যা । একটু এদিকে আসো তো ।
.
দোলার আমার কাছে চলে এলো ।
আমি দোলার কোমরে হাত রাখলাম ।
দোলা কিছু বলছে না । আমার কান্ড দেখছে । কি করছি আমি ।
আমি দোলার ঠোঁটের দিকে ঠোঁট অগ্রসর করছি । তখন মামনি বলে উঠলো ,
---কি রে কি করিস রে । সামান্য ঔষুধ খাওয়াতে এতো টাইম লাগে ।
.
কথাটা শুনে দোলা আমার ঠোঁট আঙ্গুল দিয়ে ঠেকিয়ে দিলো ।
আমি কিছু বলছিনা । আমার লক্ষ হলো দোলার ঠোঁটের দিকে ।
তখন আবার মামনি বলে উঠলো ,
---দারা আমি আসছি । বাদরটা মনে হয় তোকে ধরে রেখেছে ।
.
দোলা আমাকে দাক্কা দিয়ে আমার কাছ থেকে ছুঁটে দৌড় চলে গেলো ।
আর বলছে ,
---এই তো এসে গেছি ।
.
দূর কিচ্ছু হলো না । মামনি ডাকার আর সময় পেলো না ।
আমি খাটের উপর শুয়ে পরলাম ।
.
আমার স্পেশাল খাবার তৈরি হচ্ছে । ভূনা খিঁচুরি । সাথে কয়েক টুকরো গোস্ত ভাজি আর সাথে অল্প একটু আচার আর কয়েকটা লাল মরিচ মচমচে ভাজি । আমার প্রিয় খাবার । খেতে বেশ ধারুন লাগে ।
এখন আপনাদের কাছে আমাদের পরিচয় দেই ।
আমি মোঃ নাসির ইসলাম । মা-বাবার আদরের খুব সন্তান । আর উনি মানে মায়াবতী বউ । মিস দোলা রহমান । সে মা-বাবার আদরের ছোট মেয়ে । বলতে পারেন লক্ষী মেয়ে একটা ।
বর্তমানে দোলা কিছু করছে না । কিন্তু সামনে ডাক্তারি ফাইনাল পরীক্ষা দিবে । আর তাই গত মাসে এখানে এসেছে বাবার ঔষুখের কারণে । মামনি বলেছিলো বাসায় গিয়ে মন দিয়ে পড়তে । সামনে পরীক্ষা । কিন্তু উনি বলে আগে আব্বু সুস্থ না হওয়া পযন্ত এক পা ও কোথায় যাবে না বাসা ছেড়ে । দোলা বলে কথা । যে কথা , সেই কাজ । এক পা নরচর নাই । তাই মামনি বিথ্যা চেষ্টা করে নি ।
আর আমি উল্লাপাড়া বিজ্ঞান স্কুল এন্ড কলেজের একজন বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ।
আর তার বান্ধুবী আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষিকা ।
.
স্কুল থেকে বাসায় আসবো । তার ৫ ১০ আগে বৃষ্টি শুরু হলো । সে কি বৃষ্টি । পুরো আধঘন্টা ধরে ননস্টপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো । এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে । ছাড়ার কোনো নাম গন্ধ নাই । এদিকে সব ডিপার্টমেন্ট মিলে অনেকগুলি শিক্ষক ও শিক্ষিকা । তাই সবাইকে ছাতা দেওয়া সম্ভব হয় নি । ২ জন করে এক ছাতা দেওয়া হয়েছে । সবাই বাস স্টপে যাওয়া যায় এটা করে দেয় অধ্যাপক । কিচ্ছু করার নেই কারও । তাই আমার বাসা কাছে হওয়াতে আমাকে তার ছাতায় যেতে বললো । কি আর করা স্যারের কথা অমান্য করতে পারি না । আর আমার দ্বিমত নেই । কারণ আমি তো মেহজাবীনকে চিনি । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মাঝে স্কুল থেকে বের হলাম । ছাতার মাঝে দুজন থাকা একটু কষ্ট কর হচ্ছে । দুজনের দুই ছাইডে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির পানি ভিজে দিচ্ছে । তাই অর্ধেক রাস্তা এসে ভাবলাম আমি একটু ভিজি । তাই অল্প একটু এসে প্রায় বাসার কাছাকাছি এসে আমি ছাতা থেকে বের হলাম । মেহজাবীন কয়েকবার বলেছিলো না ভিজতে । কিন্তু কে শোনে কার কথা । মুক্ত পাখির মত ভিজতে থাকলাম । বাসার কাছে এসে দেখি বেলকুনিতে দোলা দাড়িয়ে আছে । সেটা না দেখার বান করে মেহজাবীন এর সাথে হাঁটতে থাকি । বাসার কাছে এসে মেহজাবিন কে বলে ছিলাম বাসায় এসে চা খেয়ে যেতে । সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলো । না আজ খাব না । পরে এক সময় খেয়ে যাব ।
তারপর আমি বাসায় ভেতর ঢুকে গেলাম । আর মেহজাবিন চলে গেলো তার বাসার উদেশ্যে । তার বাসা দূরে না বরং ৫ মিনিট লাগবে ।
আমি বাসায় এসে চেন্জ হয়ে এক কাপ চা খেয়ে শুয়ে পরলাম রেস নেওয়ার জন্য । রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম । মাথা অল্প একটু ব্যথা আর বার হয়ে আসছিলো বুঝতে পারলাম জ্বর নিশ্চয় আসবে ।
১ ঘন্টা বাদে রাত তখন ১১ টা বাজে । তখন প্রচন্ড জ্বর আসে । জ্বরের কারণে ঘুমের ঘোড়ে আবল তাবল বকছিলাম । এদিকে দোলা বুঝতে পেরে সারারাত্রি জলপট্টি করেছে ।
অনেক গল্প করলাম আপনাদের সাথে । প্রায় ২ ঘন্টা হয়েছে । এখন মনে হয় রান্না হয়েছে । একটু পর খাব । ইস্ ভাবতে জ্বিব্হা পানি এসে যাচ্ছে ।
.
কিছুখন পর দোলা রুমে এলো । একটু ক্লান্ত দেখাচ্ছে । মনে হচ্ছে একাই সব রান্নার কাজ করেছে । মামনিকে আধটু করতে দেয় নি মনে হয় । তাই বললাম ,
---এই সোনা এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দিব কি !
.
আমার দিকে একবার তাকালো । চোখে অগ্নি ঝর্ছে । বিষাদ ভরা কন্ঠে আবার বললাম ,
---সোনা এখানে বসে পর । আমি এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিচ্ছি ।
.
দোলা কিছু না বলে আমার কাছে এসে বসলো । আমি উঠে গিয়ে এসির পাওয়ার আর একটু বাড়িয়ে দিলাম । হাইসকুল ।
আমি গিয়ে আবার খাটের উপর বসে পরলাম । দোলা ভ্রুঁ কুঁচকে আমার দিকে তাকালো । বুঝতে পারলাম না কিছু । আমি কিছু বুঝতে পারলাম না । ভাবতেছি রান্নাঘরে কিছু হয়েছে নাকি । তখন আমার হাতের উপর দোলা হাতটা রেখে দিলো । আমি দোলার দিকে তাকালাম । চোখের কোণে পানি জমে আছে । কি বেপার দোলা কাঁদছে ।
আমি দোলার হাতটা দুহাত দিয়ে ধরলাম । একটু খানি তাকিয়ে থাকলাম । তারপর বললাম ,
---এই কাঁদে কেনো সোনা ।
.
কিছু বললো না ।
---আরে বাবা কি হয়েছে বলো আমাকে । রান্না করতে গিয়ে হাতে লেগেগেছে বুঝি ।
.
তবুও কথা বলছে না । সেই একভাবে তাকিয়ে আছে ।
কিছু বুঝতে পারছিনা । কি হয়েছে মেয়েটার ? নাকি মামনি কিছু বলেছে ।
---আচ্ছা আমার জন্য বকা দিছে মানি !
.
ফিক করে কেঁদে দিয়ে আমার বুকের মাঝে মাথাটা লুকালো । আমি আর কিছু বললাম না । আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । শুধু কাঁন্না শুনে যাচ্ছি । মাঝে মাঝে ফিক করে একটু ঝাকি দিয়ে উঠছে । মনে হচ্ছে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে । কি হয়েছে তাহলে ।
---আচ্ছা বাবা স্যরি । আর কখন এমন করবোনা । এবার ক্ষমা করে দাও ।
.
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । আমার কেমন জানি ভয়ের বাসা বুনতে লাগলো মনের ভেতর । এমন করে তো কখন কাঁন্না করে নি । আজ হঠাৎ করে । বুঝতে পারছিনা ।
---আচ্ছা বাবা আমি তোমার সামনে কান ধরে উঠবস করছি তবুও কাঁন্না করো না ।
.
তবুও কাঁন্না থামছেনা । আমি দোলাকে বুকের ভেতর থেকে সরিয়ে দিয়ে কান ধরবো । কিন্তু দোলা এমন ভাবে আমাকে জরিয়ে ধরেছে মনে হচ্ছে রাক্ষসী এসে তাকে নিয়ে যাবে । তাই জোর করে ছাড়ালাম না । আমার খারাপ লাগছেনা বরং এক ধরনের অনুভুতি অনুভব করছি ।
কিছুখন পর দেখি কাঁন্না শেষ কিন্তু মাঝে মাঝে ফিক করে ঝাকি দিয়ে উঠছে । তাই আবার বললাম ,
---সোনা মামনি কিছু বলেছে ।
.
মাথা দিয়ে না করলো । আমি জানতাম মামনি কিছু বলবেনা । দোলা হাজার কিছু করলে তবুও দোলাকে কিছু বলবেনা । তাহলে কি হয়েছে ।
---সোনা তুমি কি রাঁন্না করতে গিয়ে হাতে লেগেছে । যাও আর রাঁন্না করতে হবেনা । শুধু ভাত খাব আর কিছুনা ।
.
মাথা দিয়ে না করলো । কিন্তু বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে ।
---সোনা কি হয়েছে তোমার । আম্মা-আব্বারর কথা মনে পরেছে খুব । আচ্ছা কাল ছুটি নিয়ে তোমাকে রেখে আসবো কেমন ।
.
মাথা দিয়ে না করছে । খুব রাগ হচ্ছে । কিন্তু কিচ্ছু করার নেই ।
সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করলাম । কিন্তু ব্যর্থ হলাম ।
তাই আর কিছু না বলে মাথা হাত দিয়ে বিলিয়ে দিচ্ছি ।
একটু পর দোলার শরীর একটু ঝাকিয়ে দিয়ে উঠলো । বুঝতে পারলাম ঠান্ডা অনুভব করছে । তবুও কিছু বলছেনা । আমি এবার দুহাত দিয়ে মাথাটা তুলে দুচোখের অশ্রু মুঁছে দিলাম । মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম ,
---শীত লাগছে ।
.
মাথা দিয়ে বললো হ্যা ।
আমি দোলাকে বসিয়ে এসি নরমাল কুল করে দিলাম ।
আবার দোলার হাত দরে বললাম ,
---কি হয়েছে সোনা । এমন করে কাঁন্না করছো যে ।
.
চোখের অশ্রু মুঁছে বললো ,
---যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো খাবার খাবে । ( কাঁন্না কন্ঠে )
---আরে সোনা আমি কিছু করেছি কি ।
---না ।
---তাহলে কাঁন্না করছো যে ।
---যাও তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে এসো ।
---আরে বলনা সোনা ।
---যাও তো খুব ক্ষুধা লেগেছে ।
.
জোর করে পাঠিয়ে দিলো ওয়াশ রুমে ।
আর বললো ,
---আমি টেবিলে খাবার রেডি করছি ।
.
বলে চলে গেলো দোলা ।
আমি ওয়াশে চলে গেলাম ।
.
ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলে চুল আচ্ড়াছি ।
দেখছেন কত লক্ষী মেয়ে । আসলে অনেক লক্ষী একটা মেয়ে ।
এমা তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে না হলে বুঝতে তো পারছেন ।
ড্রাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখি মামনি আব্বু দুজনে বসে আছে আমার জন্য ।
তারচেয়ে বেশি অবাক হলাম প্লেট তিনটা । কি ব্যাপার দোলা খাবে না নাকি ।
ঘড়ির দিকে তাকালাম । রাত ৯:৪০ বাজে ।
আমি চেয়ারে বসে গেলাম ।
প্লেটে খাবার দিলো । ভূনা খিঁচুরি দেখে চোখ জ্বলজ্বলে হয়ে উঠে সাথে জ্বিব্হা পানি এসে গেলো । দেখে সয়ছে না ।
---একটু তাড়াতাড়ি দাও তো ।
.
মামনি আর আব্বু হেসে উঠলো এক সাথে ।
---এই আমাকে আগে দাও তো ।
---পাগল নাকি তুমি । আম্মা-আব্বাকে না দিয়ে তোমাকে দিব নাকি । ( চোখটা বড় বড় করে )
.
মামনি পাশ থেকে বলে উঠলো ,
---ঠিক আছে মা তুমি ওকে আগে দাও ।
---না মা আপনারা আগে...
.
পাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো ,
---বউমা তুমি পাগলটাকে আগে দাও আমরা একটু পরে খাই ।
---না বাবা আপনারা আগে খাবেন তারপর ও ।
---মা তুমিও এক সাথে বস । সবাই এক সাথে খেয়ে উঠি ।
---না মা আপনারা খেয়ে নিন আমি পরে খেয়ে নিন ।
.
হায়রে কপাল । কবে বাবা হমু তারপর আমাকে এরকম করে খেতে দিবে সেই দিনের অপেক্ষায় করতে থাকি ।
আমি বলে উঠলাম ,
---ডাক্তার ম্যাডাম সবাই এক সাথে খেয়ে উঠি ।
---আপনারা....
---সমস্যা নেই বসে পরেন আমার পাশের চেয়ারে ।
.
পাশ থেকে মামনি আর আব্বু হেসে উঠলো ।
দোলা একটু লজ্জা পেলো । তারপর বসে পরলো পাশের চেয়ারে ।
দোলা আব্বু মামনিকে খেতে দিলো তারপর আমার প্লেটে । এতে আমার কিছু যায় আসে না । সম্মান তো বড়দের দিতে হয় বিষেশ করে বউদের শোশুর শাশুড়ীকে । তো দোলা সেরকম কিছু করেছে ।
---এই যে স্যার আপনার আবার কি হলো । খাবার সামনে নিয়ে বসে আছেন কেনো ।
.
আমি দোলার দিকে তাকালাম । কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো ।
আমার খাবার খাওয়া শুরু করলাম ।
এক লোকমা খেলাম । আহ্ কি খেতে মজা ।
মামনি আর আব্বুর প্রশংসা করছে । এমনিতে সব খাবার ভালো করে রাঁন্না করে দোলা । বলা যায় যে সে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট বউ ।
কিছুখন খাওয়ার পর দোলা কুনুই দিয়ে গুতো দেয় । আমি দোলার দিকে তাকালাম । চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো মামনি আর আব্বুর দিকে ।
মজাদার খাবার খাচ্ছি তাই কোনো দিকে খেয়াল করিনি ।
এর মানে দোলা আমাকে বোঝাচ্ছে তাকে খায়ে দিতে হবে ।
আব্বু প্রায় মামনিকে খায়ে দেয় । এটাতে চমকে যাওয়ার কিছু নেই ।
আমিও এক লোকমা তুলে দোলাকে খায়ে দিলাম ।
আব্বু মামনিকে বললো ,
---পাগল শোন যত বউকে খায়ে দিবি তত মহব্বত বেড়ে যায় দুজনার মাঝে ।
.
আমি আর দোলা আব্বু দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
মামনি বলে উঠলো ,
---মা শোন , মেয়েদের মা-বাবার পরে যদি ভালোবাসা থাকে সেটা স্বামীর ভালোবাসা ।
.
দোলা মাথা দিয়ে শিকার করলো ।
---এটা হয়তো জানোনা যে এক প্লেটে খাবার খেলে মহব্বত বেড়ে যায় দুজনের প্রতি ।
---আচ্ছা আব্বু দাদু সে বলে দাদুভাইকে এক প্লেটে ছাড়া ভাত খেত না ।
---হ্যা তোমার দাদু সারাজীবন তোমার দাদুভাই এর সাথে এক প্লেটে ভাত খেত । তাই এত মহব্বত ছিল যে কখন ঝগড়া হয়েছে বলে মনে পরে না ।
.
বলে চোখটা মুঁছে ফেললো ।
দাদু আর দাদুভাই দুজন মারা গেছে প্রায় ১০ বছর হয়ে গেলো । তারা খুব ভালো মানুষ ছিলেন । আব্বু ডিফেন্সের চাকরির জন্য পোষ্টিং এ থাকতেন আর আমি দাদু আর দাদুভাই এর কাছে বড় হয়েছি ।
---বাবা এই গোস্ত টুকু নিন ।
---না মা পাগলটাকে দাও ।
---আরও আছে তো ।
.
বলে ৩ টুকরো গোস্ত দিয়ে দিলো ।
---মা আপনি তো খেতে পারছেনা । এই টুকু নিন ।
---না মা বয়স হয়েছে তাই আর খেতে পারি না । তুই আমার ছেলেটাকে বেশি করে দাও । ওর প্রিয় খাবার । খুব ভালোবাসে ।
---জ্বী মা দিয়েছি সে মনে হয় আর খেতে পারবেনা ।
---ঠিক আছে তুমি নাও ।
---নিয়েছি মা আমি আর পারবোনা ।
.
আমি খাওয়াতে ব্যাস্ত । খুব সুস্বাদু হয়েছে তো তাই কারও দিকে খেয়াল নিচ্ছি না ।
---কি করলা এগুলি ।
.
আব্বু মামনি দুজনি তাকালো ।
---আমি কি রাক্ষস নাকি যে এতো খেতে পারবো ।
---আমি জানি তুমি ঠিক খেতে পারবা ।
---আমি তো পেটুক না ।
---পেটুক না হলে । কিন্তু রাক্ষস ।
.
আব্বু মামনি আর দোলা অট্টহাসিতে হেসে উঠলো ।
.
গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছি আর মহারাণী সাঁজগোজ করছে ।
আড় চোখে দেখছি দোলাকে । বেশ সাঁজগোজ করতে পারে মেয়েটা ।
একটু পর পর আড় চোখে দেখছি । সেটা লক্ষ করছে মেয়েটা তাই মুখটা বাঁকা করছে যখনি তাকাচ্ছি ।
আমার একটু ঘুম পাচ্ছে । রাত তো কম হয় নি । রাত প্রায় ১০:৩০ বাজে । তাই চোখটা বন্ধ করলাম তখনি মেয়েটা বলে উঠলো ,
---এই তুমি ঘুমাচ্ছো কেনো ।
.
মাথাটা ঘুরিয়ে বললাম ,
---খুব ঘুম পাচ্ছে সোনা ।
.
চোখ বড় বড় করে তাকালো । যদি ম্যাজিশিয়ান হতো তাহলে নিশ্চয় কিছু করে ফেলতো । তাই ম্যাজিশিয়ান না হওয়াতে বেঁচে গেলাম ।
---আবার ঘুমাচ্ছো ।
---বললাম তো খুব ঘুম পাচ্ছে সোনা ।
---তুমি ঘুমাচ্ছো তো আমি সাঁজগোজ করছি কি এমনিতে ।
---সাঁজগোজ করছো কেনো ।
---যমুনা ফিউচার পার্কে যাবো ।
.
কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম । মাথার লাট বল্টু লুস হয়েছে নাকি । এই রাতের বেলায় কেউ কি পার্কে যায় নাকি । না ভুত ধরেছে । নিশ্চয় তেঁতুল গাছের ভুত ধরেছে ।
---এই নিন পান্জাবি তাড়াতাড়ি পোশাক চেন্জ করুন ।
---মানে । পোশাক চেন্জ করবো কেনো ?
---আমার পছন্দের সাথে দেখা করতে যাবো । তাই সাঁজগোজ করছি বুঝলে ।
.
আগে তো জানতাম না দোলার পছন্দের মানুষ আছে । মেয়ে মানুষ বলে কথা । পছন্দের মানুষ থাকলে কোনো দিনও বলবে না ।
---কি হলো এখনও দাড়িয়ে আছো । ( দমক দিয়ে / জ্বাল কন্ঠে )
.
কি আর করা বউ বলে কথা । বউ এর কথা অমান্য করা লাগেনা কোন মনিষ্যি নাকি বলেছে । ( ফান ) তাই আমিও অমান্য করলাম না । তাড়াতাড়ি করে চেন্জ হতে লাগলাম ।
.
তাড়াতাড়ি করে চেন্জ করে নিলাম পোষাকটা ।
বউ আমাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে ।
---ম্যাডাম মশা ঢুকে যাবে তো ।
.
মিষ্টি হেসে দিয়ে মনে মনে কি জেনো বললো ।
---এতো রাতে তোমার পছন্দের মানুষ পার্কে মশার কামড় খেতে বসে আছে নাকি ।
---হ্যা এতো রাতে কেনো সারারাত্রি মশার কামড় খেতে পস্তুত সে ।
---বাহ্ মজনু প্রেমিক সে ।
---চলেন ।
---কোথায় ?
---বারে ভুলে গেলেন নাকি ।
---আমি যেতে পারবোনা ।
---আরে এই টুকু হেল্প করতে পারবেন না আমাকে ।
---হেল্প ! নিজের বউকে অন্য জনের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যেতে আমি পারবোনা । তোমার প্রেমিকে ফোন দাও । সে এসে তোমাকে নিয়ে যাবে ।
---তুমি কি পাগল নাকি । বাবা যদি জানে যে সে আমার প্রেমিক তো ডাইরেক ক্রস ফায়ার করবে বুঝেছো । আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র প্রেমিক সে যদি মারা যায় তো ।
---আচ্ছা তোমার প্রেমিক যদি না আসে ।
---আরে আসবে সিয়র আমি ।
---আচ্ছা সত্যি কি তোমার প্রেমিক আছে ।
.
চোখ বড় বড় করে তাকালো ।
কেমন জানি অনুভুতি হতে লাগলো । সত্যি কি দোলার পছন্দের মানুষ আছে ।
---এই কি হলো সোনা চলো না ।
---চলো ।
---আমি হেঁটে যেতে পারবোনা ।
---তুমি তোমার প্রেমিকের সাথে দেখা করবে আমি নিয়ে যাচ্ছি । কিন্তু আবার বলছো হেঁটে যেতে পারবো না ।
.
চোখটা বড় বড় করে তাকালো ।
মনের ভেতর সে অজানা ভয় করছে । সত্যি নাকি আমার সাথে মজা করছে ।
---কি হলো ।
---ঠিক আছে কোলে নিচ্ছি ।
.
দোলাকে কোলে তুলে নিলাম । দোলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে ।
মনে হচ্ছে কোনো সিনেমার হিরো হিরোইনকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে ।
---এই এদিকে কোথায় যাও ।
---কেনো ! বাহিরে ।
---বাহিরে না । ছাঁদে চলো ।
---ছাঁদে মানে । বেটা কি আমাদের ছাঁদে চলে এসেছে । চল আগে বেটাকে দেখাচ্ছি মজা ।
.
দোলা কিছু বললো না । হাত দিয়ে মুখ চেঁপে হাসছে ।
আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে । বেটা আমার বউ এর লগে দেখা করতে আমাদের বাসার ছাঁদে চলে এসেছে । সাহস কত বেটার । আগে ছাঁদে যেয়ে নেই তারপর বেটার বারোটা বা যাচ্ছি । বেটা মানুষ চেনে না ।
---বির বিরিয়ে কি বলো সোনা ।
.
চোখে আগুন । আর ভেতর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে ।
তবুও হাসি মুখে বললাম ,
---কিছু না সোনা ।
---আমি জানি কি বললে ।
.
দোলার দিকে তাকালাম । কিছু আর বললাম না ।
আমার হাসি মুখটা পেঁচার মতো হয়ে গেছে ।
.
একটু পর ছাঁদে চলে এলাম । আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো একটা একটা করে সিঁড়ি যখন উঠতাম ।
ছাঁদে গিয়ে দোলনায় বসিয়ে দিলাম ।
আমি এদিক ওদিক তাকালাম । কোথাও কিচ্ছু দেখতে পেলাম না ।
ফুটফুটে জস্ন্যা রাতে ছাঁদে সব দেখা যাচ্ছে ।
বেটাটা গেলো কই । এক গুঁসি মেরে নাক ফাঁটাইয়া ফেলমু । বেটা বিয়ে হয়েছে তারপরে প্রেম করে ।
দোলার দিকে তাকালাম । হাসছে হাসছে মিটি মিটি । সে হাসি দেখে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ।
---তোমার পছন্দের মানুষ কোথায় দেখতে পাচ্ছি না ।
---তুমি দেখতে পাবে না । কিন্তু ঠিক আমি দেখতে পাচ্ছি ।
.
কথা শোনা মাত্র পিঁছনে ঘুরে তাকালাম । পিঁছনে তো কেউ নেই ।
---কই তোমার প্রেমিক মজনু । বেটা ভয় খেয়েছে কর্নেল আলমগীর সাহেবের বাড়ি বলে কথা । তারপরে ছাঁদে । নিশ্চয় বেটা ভয় খেয়েছে ।
---সে ভয় খায় না ।
---তো বেটাটা কোথায় ।
---আমার সামনে ।
---সামনে মানে ।
.
দোলা দাড়িয়ে গেলো । কিছু বুঝলাম না দোলার কথাটা ।
দোলা আমার কাছে চলে এলো ।
আলতো করে পান্জাবির কলার ধরে বললো ,
---দেখবে আমার পছন্দের মানুষ ।
.
আমার বুকের ভেতর ঝড় ভয়তে লাগলো । সত্যি কি দোলা অন্য কাউকে পছন্দ করে । না ঠিক আছে । সমস্যা নেই করলে করুক । সে যাকে পছন্দ করবে তার কাছে দিয়ে দিব ।
---কি হলো । দেখবে না আমার পছন্দের মানুষ ।
.
বুকের ভেতর অনেক কষ্ট চাঁপা দিয়ে বললাম ,
---হুমম ।
---যে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে , সেই হলো আমার পছন্দের মানুষ । যাকে আমি স্পর্শ করে আছি , সেই আমার প্রেমিক । যার সাথে দেখা করতে এসেছি , সেই হলো আমার সারাজীবনের সঙ্গী ।
.
কথাগুলি বলতে বলতে দোলা কেঁদে ফেললো । আরও কিঁছু বলতে যাবে কিন্তু বলতে পারলোনা । কাঁন্না শুরু করে দিলো আমাকে জড়িয়ে ধরে ।
আমি আর ধেরি না করে দোলাকে জড়িয়ে ধরলাম বুকের মাঝে । চোখ দিয়ে অজান্তে অশ্রু গড়িয়ে পরছে ।
---এই তু... তুমি কাঁদ..কাঁদতেছো কেনো । ( কাঁন্না করে )
---এমনি সোনা ।
---এমনি নাকি আমাকে হারাতে চাও না ।
.
কি বলবো বুঝে উঠে পারছিলাম না । কি বলবো দোলাকে । কিছু বলার নাই আমার ।
---কি হলো বলো । ( কাঁন্না কন্ঠে )
---হ্যা আমি তোমাকে হারাতে চাই না । আমি চাই তুমি আমার এই বুকের মাঝে সারাজীবন এভাবে লুকিয়ে থেকো ।
.
দোলা কিছু বললো না । আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । জেনো ছেড়ে দিলে কোথাও হারিয়ে যাবো আমি ।
এভাবে কেটে গেলো কিছু সময় ।
.
আমি দোলাকে বললাম ,
---একটা কথা বলি ?
.
দোলা বুকের মাঝে থেকে বলতে বললো ,
---হুমম বলো !
---তখন ওভাবে কাঁন্না করলে কেনো ।
.
দোলা চুপ করে আছে ।
---কি হলো বলো ।
---আম্মু ফোন দিয়েছিলো কাল মেডিকেলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের যেতে বলেছে ।
---যাবে তাই বলে কাঁন্না করতে হবে ।
---আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা ।
---পাগল নাকি তুমি । শোন তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে হবেনা । তোমার বাবা-মার স্বপ্ন তোমাকে ডাক্তার বানাবে । আর আমারও স্বপ্ন তুমি ডাক্তার হবে ।
---আমার কেনো জানি ভালো লাগছেনা তোমাকে ছেড়ে যেতে ।
---আরে এরকম বোকার মত কথা বললে হবে । তুমি আগে তোমার স্বপ্ন পূরণ কর । আমি তোমাকে মাঝে মাঝে দেখে আসবো ছুঁটি পেলে । ঠিক আছে ।
---হুমম ।
---লক্ষী বউ আমার ।
---ওহ্ ছাড়ো আমাকে ।
---কেনো ?
.
উত্তর না দিয়ে দোলনার পিঁছনে গিয়ে কি জেনো বের করছে ।
আরে গোলাপ পেলো কোথায় থেকে ।
---এই নাও ।
---আমি গোলাপ দিয়ে কি করবো ।
---গোলাপ দিয়ে কি করবে মানে । আমাকে প্রপোজ করবে ।
---আমি তো পারি না । আর মানুষে শুনলে কি ভাববে বুঝেছো । একটা শিক্ষক হয়ে প্রপোজ করছি ।
---তুমি তো আর অন্য মেয়েকে প্রপোজ করছোনা । তুমি তোমার বউকে প্রপোজ করছো বুঝলে মাষ্টার মশাই ।
---হ্যা বুঝেছি । কিন্তু আমাকে দিয়ে হবে না ।
---কি বললে তুমি.. তুমি প্রপোজ করবা কিনা । ( রেগে )
---আরে সোনা রেগে যাচ্ছো কেনো ।
---যেটা বলছি সেটা করবে কিননননননননননননা ।
---ঠিক আছে করছি ।
---ঠিক সিনেমার হিরোদের মতো ।
---হিরোদের মতো জানি পারবো কিনা । কিন্তু আমারটা দেখে হিরো রা নকল করবে ।
---ইমমম নকল করবে হিরো রা আবার ।
.
আমি গোলাপ হাতে নিয়ে ঠিক সিনেমার হিরোদের মতো হাঁটু গেরে প্রপোজ করলাম ....
.
তুমি কি আমার চাঁদ হবে ?
যে আকাশের মাঝে চাঁদের আলোতে আমি সাঁতার কাটবো ।
তুমি কি আমার মেঘ হবে ?
যে মেঘ পাহাড়ের গায়ে বৃষ্টি ছড়িয়ে দিবে ।
তুমি কি আমার চোখের দৃষ্টি হবে ?
যে দৃষ্টি দেখে আমি আমার সারাজীবন কাটিয়ে দিব ।
আমি তোমাকে আমার চাইতে অনেক অনেক ভালোবাসি...
-----আই লাভ ইউ দোলা....
.
দোলা ফুলটা নিয়ে বলো ,
হ্যা আমি তোমার চাঁদ হবো !
যে আকাশের মাঝে চাঁদের আলোতে তুমি সাঁতার কাটবে ।
হ্যা আমি তোমার মেঘ হবো !
যে মেঘ পাহাড়ের গায়ে বৃষ্টি ছড়িয়ে দিবো ।
হ্যা আমি তোমার চোখের দৃষ্টি হবো !
যে দৃষ্টি দেখে তুমি তোমার সারাজীবন কাটিয়ে দিবে ।
আমি তোমাকে আমার চাইতে অনেক অনেক ভালোবাসি...
-----আই লাভ ইউ নাসির....
.
দোলা নাসিরের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে ।
দোলা আর নাসির দোলনায় বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ।
আর ঝগড়া করছে ,
---জানো সোনা আমাদের ছেলে হবে ।
.
আবার নাসির বলছে ,
---না সোনা আমাদের মেয়ে হবে ।
---না , আমাদের ছেলে ।
---না আমাদের মেয়ে হবে ।
---তুমি বেশি বোঝো কেনো । আমাদের ছেলে হবে বুঝলে ।
---আচ্ছা সোনা ঠিক আছে । আমাদের ছেলে হবে হয়ছে ।
---হুমমম হয়ছে । এখন চাঁদ দেখো । কত সুন্দর দেখা যাচ্ছে ।
---তার চেয়ে বেশি সুন্দর তোমাকে দেখাচ্ছে সোনা ।
সমাপ্ত ==== ☺☺☺
No comments