অসাধারন 👌👌👌
This is story so awesome.Try to read and learn.....
written by me.
↓↓↓
ছেলেটি ক্লাসের এককোণের বেঞ্চিতে বসে থাকতো। কারো সাথে তেমন কথা বলতো না। তার কোনো বন্ধুও নেই ক্লাসে। ছেলেটার মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গায়ে মলিন পাঞ্জাবী, দেখলেই কেমন ভক্তি ধরতো না।
ক্লাসের অফ টাইমে দেখতাম সবসময় কী যেন লেখে! একদিন ভাবলাম যাই দেখে আসি, কী লেখে। পাশে গিয়ে বসলাম ছেলেটার।
"হ্যালো"
"হ্যালো, পল্লবী"
"সে কী! আমার নামও জানো?"
"বারে, এতদিন একসাথে পড়ছি, নামও জানবো না? সবাই ডাকে, শুনি না নাকি?"
"তোমার নাম কী?"
"তন্ময়।"
"কী লেখো এত তুমি?"
"প্রেমের কবিতা।"
"কবি নাকি তুমি?"
"আত্মস্বীকৃত কবি আর কি!", মলিন হেসে উত্তর দিলো তন্ময়।
কবিতা নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই। কবি নিয়েও আলাদা ফ্যান্টাসি নেই। তবে তন্ময়কে আমার ভালোই লাগলো। বন্ধুত্বও জমে গেলো। এতটাই জমে গেলো যে দুজন ক্লাসে পাশাপাশি বসতাম, ক্যাম্পাস সারাটাক্ষণ একসাথেই থাকতাম।
তন্ময় বেশিরভাগ সময় কবিতা লিখতো। মানুষ যে এভাবে এত ধৈর্য নিয়ে দিনরাত কবিতা লিখতে পারে তা তন্ময়কে না দেখলে বুঝতাম না। অথচ সেসব কবিতার অর্ধেকেরও বেশি সে নিজেই পাঠিয়ে দিতো ডাস্টবিনে। বাকি কবিতাগুলো কবিতার খাতায় তুলতো। আর একটা কাগজে লিখে আমাকে দিয়ো বলতো, "পল্লবী, একটু পড়ে বলবি কেমন হয়েছে?"
কবিতা পড়তে আমার বড়ই অরুচি। এসব কি পড়ার জিনিস! তাও বড় কবির কবিতা না। নিজের বন্ধুর কবিতা। এই কবিতার নেশাই এই ছেলেকে ডুবাবে। কী যে আছে এর জীবনে! সে প্রায় দিন আমার হাতে এক টুকরো কাগজ ধরিয়ে দিত যেখানে লেখা থাকতো কবিতা। আমি বলতাম পড়ে জানাবো। তারপর রাস্তার মোড়ে ধরিয়ে দেয়া প্রোসপেক্টাসের মতই অযত্নে কোনোদিকে ফেলে দিতাম। পরদিন ও জানতে চাইতো "কবিতাটা কেমন হয়েছে?"
খানিক দ্বিধা নিয়ে আমি বলতাম, "ভালো"
সেই বলায় জোর থাকতো না গলায়। তারপর সেই উত্তরে ভালো বলাটা নিত্যকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। জানি না তন্ময় বুঝতো কিনা কবিতাগুলো আমি পড়িই না, ওর প্রশ্নের উত্তরে রোজ রোজের অভ্যাসে ভালো বলি। কিন্তু একদিনের জন্যও দেখি নি তন্ময় তার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ হারিয়েছে আমার হাতে কবিতার চিরকুট গুঁজে দিতে আবার পরদিন এসে মহাসমারোহে জিজ্ঞাসা করতে কবিতাটা কেমন লেগেছে।
আমার এখন প্রায় বিরক্তিই ধরে গেছে। ছেলেটাকে আমার বড্ড ভালো লাগে। কিন্তু তার এই কবিতার পাগলামি বড় অসহ্য! একদিন তন্ময়কে বললাম, "তন্ময়! তোকে ভালোবাসি। তুই ভালোবাসিস?"
তন্ময় হেসে বললো, "কবিতায় উত্তর জানাবো।"
রাগে গা জ্বলেই গেলো। বললাম, "রাখ তোর কবিতা। হয় আমাকে ভালোবাসবি, নয়তো কবিতা লিখবি। আমাকে চাইলে কবিতা ছাড়তে হবে।"
তন্ময় হতভম্বের মত তাকিয়ে রইলো। ওর চোখে স্পষ্ট ব্যথা। সে ব্যথা দেখেও আমি কেমন গলে যায় নি। আজ মনে পড়লে নিজেকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়। আমি উঠে চলে আসলাম।
পরদিন তন্ময় আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বললো। তোমাকে দেয়া এই আমার শেষ কবিতা। তন্ময়ের সামনেই আমি সেই কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম। তন্ময়ের চোখের জল গড়িয়ে ওর পাঞ্জাবীর বোতাম ভিজিয়ে দিচ্ছে।
"তুমি কি কবিতা ছাড়তে পারবে?"
"না, পল্লবী।"
"ঠিক আছে।"
আমি হনহন করে হেঁটে চলে আসলাম। এরপর পুরো ছাত্রজীবনে আমাদের আর কথাই হয় নি। ক্যাম্পাসের দিনগুলো পেরিয়ে আমি চলে এসেছি কর্মজীবনে। তন্ময় কোথায় আছে জানি না। কখনো জানতেও চাই নি। হয়তো কবিতাই খেয়েছে ওকে!
অফিসে একদিন ক্যুরিয়ার থেকে একটা ছোট পার্সেল দিয়ে গেলো। পার্সেল খুলে দেখি একটা বই। বইয়ের নাম "পল্লবী"! ভেতরের পপাতাগুলোতে ববেশ কিছু কবিতা। বইয়ের সামনের পাতায় হাতে লেখা,
"তুমি আর কবিতা এক সত্ত্বাই ছিলে। যেদিন কবিতাকে আমি অস্বীকার করবো, অস্বীকার করা হবে তোমাকে। আমি আমার জীবনে তোমাকে অস্বীকার করতে পারি না, পল্লবী।"
নিচে তন্ময়ের সিগনেচার। আমার যেন এক মুহূর্তের ঝটকা লাগলো। এক নিঃশ্বাসে বইয়ের পাতাগুলো উল্টাতে লাগলাম। সব কবিতা এক বসাতেই পড়ে ফেললাম। এমনভাবে পড়ছিলাম যেভাবে বহুদিনের বুভুক্ষুকে খাদ্য দিলে গোগ্রাসে খায়। বইয়ের ভেতরে পল্লবী নামের ছড়াছড়ি। কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে যেন পল্লবীকে না পাবার হাহাকার। চোখের জলে গড়িয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার শাড়ির পাড়।
এতদিন পরে কেন এই বই পাঠালো আমার জন্য! কেমন সব এলোমেলো লাগছে। না পাঠালে কীই বা হতো। বইটা একদম নতুন। এই বছরেই মুদ্রিত। কাগলে এখনও ছাপাখানার গন্ধ।
অফিস শেষে রিকশা নিলাম। গন্তব্য বইমেলা। মেলায় গিয়ে বইয়ে লেখা প্রকাশনীর নামটা খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেছি। স্টলের সামনে বেশ জটলা। দূরে দাঁড়িয়ে আছি। জটলার ভেতরে তন্ময়জে খুঁজছে দুচোখ। বেশ খানিক পরে দেখলাম তন্ময়কে। হাসিমুখে অটোগ্রাফ দিচ্ছে একটার পর একটা বইয়ে। আশেপাশে অসংখ্য মানুষ, তরুণীই বেশি। অথচ এসব কবিতা যখন সে লিখেছে তখন পাশে কেবল আমিই ছিলাম হয়তো, অথবা পাশে ছিলো কেবল আমার না থাকার একাকীত্ব।
কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখলাম তন্ময়কে। আগের মতই আছে। বয়স বাড়বার সামান্য একটু ছাপ আছে গড়নে। বাকিসব একেবারে আগের মত। সেই হাসি, সেই চাহনি, সেই আগের তন্ময়। শুধু আগের মত নেই পল্লবী!
সন্ধ্যা নামছে। ফিরতে হবে। ফোনে অনেকক্ষণ থেকে রিং হচ্ছে। রিসিভ করা দরকার।
"হ্যালো!"
"আম্মু, তোমার আসতে দেরী হচ্ছে কেন?"
"আসছি বাবা, একটু বইমেলায় এসেছিলাম।"
THANKS..... 👍👍👍
written by me.
↓↓↓
ছেলেটি ক্লাসের এককোণের বেঞ্চিতে বসে থাকতো। কারো সাথে তেমন কথা বলতো না। তার কোনো বন্ধুও নেই ক্লাসে। ছেলেটার মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গায়ে মলিন পাঞ্জাবী, দেখলেই কেমন ভক্তি ধরতো না।
ক্লাসের অফ টাইমে দেখতাম সবসময় কী যেন লেখে! একদিন ভাবলাম যাই দেখে আসি, কী লেখে। পাশে গিয়ে বসলাম ছেলেটার।
"হ্যালো"
"হ্যালো, পল্লবী"
"সে কী! আমার নামও জানো?"
"বারে, এতদিন একসাথে পড়ছি, নামও জানবো না? সবাই ডাকে, শুনি না নাকি?"
"তোমার নাম কী?"
"তন্ময়।"
"কী লেখো এত তুমি?"
"প্রেমের কবিতা।"
"কবি নাকি তুমি?"
"আত্মস্বীকৃত কবি আর কি!", মলিন হেসে উত্তর দিলো তন্ময়।
কবিতা নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই। কবি নিয়েও আলাদা ফ্যান্টাসি নেই। তবে তন্ময়কে আমার ভালোই লাগলো। বন্ধুত্বও জমে গেলো। এতটাই জমে গেলো যে দুজন ক্লাসে পাশাপাশি বসতাম, ক্যাম্পাস সারাটাক্ষণ একসাথেই থাকতাম।
তন্ময় বেশিরভাগ সময় কবিতা লিখতো। মানুষ যে এভাবে এত ধৈর্য নিয়ে দিনরাত কবিতা লিখতে পারে তা তন্ময়কে না দেখলে বুঝতাম না। অথচ সেসব কবিতার অর্ধেকেরও বেশি সে নিজেই পাঠিয়ে দিতো ডাস্টবিনে। বাকি কবিতাগুলো কবিতার খাতায় তুলতো। আর একটা কাগজে লিখে আমাকে দিয়ো বলতো, "পল্লবী, একটু পড়ে বলবি কেমন হয়েছে?"
কবিতা পড়তে আমার বড়ই অরুচি। এসব কি পড়ার জিনিস! তাও বড় কবির কবিতা না। নিজের বন্ধুর কবিতা। এই কবিতার নেশাই এই ছেলেকে ডুবাবে। কী যে আছে এর জীবনে! সে প্রায় দিন আমার হাতে এক টুকরো কাগজ ধরিয়ে দিত যেখানে লেখা থাকতো কবিতা। আমি বলতাম পড়ে জানাবো। তারপর রাস্তার মোড়ে ধরিয়ে দেয়া প্রোসপেক্টাসের মতই অযত্নে কোনোদিকে ফেলে দিতাম। পরদিন ও জানতে চাইতো "কবিতাটা কেমন হয়েছে?"
খানিক দ্বিধা নিয়ে আমি বলতাম, "ভালো"
সেই বলায় জোর থাকতো না গলায়। তারপর সেই উত্তরে ভালো বলাটা নিত্যকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। জানি না তন্ময় বুঝতো কিনা কবিতাগুলো আমি পড়িই না, ওর প্রশ্নের উত্তরে রোজ রোজের অভ্যাসে ভালো বলি। কিন্তু একদিনের জন্যও দেখি নি তন্ময় তার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ হারিয়েছে আমার হাতে কবিতার চিরকুট গুঁজে দিতে আবার পরদিন এসে মহাসমারোহে জিজ্ঞাসা করতে কবিতাটা কেমন লেগেছে।
আমার এখন প্রায় বিরক্তিই ধরে গেছে। ছেলেটাকে আমার বড্ড ভালো লাগে। কিন্তু তার এই কবিতার পাগলামি বড় অসহ্য! একদিন তন্ময়কে বললাম, "তন্ময়! তোকে ভালোবাসি। তুই ভালোবাসিস?"
তন্ময় হেসে বললো, "কবিতায় উত্তর জানাবো।"
রাগে গা জ্বলেই গেলো। বললাম, "রাখ তোর কবিতা। হয় আমাকে ভালোবাসবি, নয়তো কবিতা লিখবি। আমাকে চাইলে কবিতা ছাড়তে হবে।"
তন্ময় হতভম্বের মত তাকিয়ে রইলো। ওর চোখে স্পষ্ট ব্যথা। সে ব্যথা দেখেও আমি কেমন গলে যায় নি। আজ মনে পড়লে নিজেকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়। আমি উঠে চলে আসলাম।
পরদিন তন্ময় আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বললো। তোমাকে দেয়া এই আমার শেষ কবিতা। তন্ময়ের সামনেই আমি সেই কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম। তন্ময়ের চোখের জল গড়িয়ে ওর পাঞ্জাবীর বোতাম ভিজিয়ে দিচ্ছে।
"তুমি কি কবিতা ছাড়তে পারবে?"
"না, পল্লবী।"
"ঠিক আছে।"
আমি হনহন করে হেঁটে চলে আসলাম। এরপর পুরো ছাত্রজীবনে আমাদের আর কথাই হয় নি। ক্যাম্পাসের দিনগুলো পেরিয়ে আমি চলে এসেছি কর্মজীবনে। তন্ময় কোথায় আছে জানি না। কখনো জানতেও চাই নি। হয়তো কবিতাই খেয়েছে ওকে!
অফিসে একদিন ক্যুরিয়ার থেকে একটা ছোট পার্সেল দিয়ে গেলো। পার্সেল খুলে দেখি একটা বই। বইয়ের নাম "পল্লবী"! ভেতরের পপাতাগুলোতে ববেশ কিছু কবিতা। বইয়ের সামনের পাতায় হাতে লেখা,
"তুমি আর কবিতা এক সত্ত্বাই ছিলে। যেদিন কবিতাকে আমি অস্বীকার করবো, অস্বীকার করা হবে তোমাকে। আমি আমার জীবনে তোমাকে অস্বীকার করতে পারি না, পল্লবী।"
নিচে তন্ময়ের সিগনেচার। আমার যেন এক মুহূর্তের ঝটকা লাগলো। এক নিঃশ্বাসে বইয়ের পাতাগুলো উল্টাতে লাগলাম। সব কবিতা এক বসাতেই পড়ে ফেললাম। এমনভাবে পড়ছিলাম যেভাবে বহুদিনের বুভুক্ষুকে খাদ্য দিলে গোগ্রাসে খায়। বইয়ের ভেতরে পল্লবী নামের ছড়াছড়ি। কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে যেন পল্লবীকে না পাবার হাহাকার। চোখের জলে গড়িয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার শাড়ির পাড়।
এতদিন পরে কেন এই বই পাঠালো আমার জন্য! কেমন সব এলোমেলো লাগছে। না পাঠালে কীই বা হতো। বইটা একদম নতুন। এই বছরেই মুদ্রিত। কাগলে এখনও ছাপাখানার গন্ধ।
অফিস শেষে রিকশা নিলাম। গন্তব্য বইমেলা। মেলায় গিয়ে বইয়ে লেখা প্রকাশনীর নামটা খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেছি। স্টলের সামনে বেশ জটলা। দূরে দাঁড়িয়ে আছি। জটলার ভেতরে তন্ময়জে খুঁজছে দুচোখ। বেশ খানিক পরে দেখলাম তন্ময়কে। হাসিমুখে অটোগ্রাফ দিচ্ছে একটার পর একটা বইয়ে। আশেপাশে অসংখ্য মানুষ, তরুণীই বেশি। অথচ এসব কবিতা যখন সে লিখেছে তখন পাশে কেবল আমিই ছিলাম হয়তো, অথবা পাশে ছিলো কেবল আমার না থাকার একাকীত্ব।
কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখলাম তন্ময়কে। আগের মতই আছে। বয়স বাড়বার সামান্য একটু ছাপ আছে গড়নে। বাকিসব একেবারে আগের মত। সেই হাসি, সেই চাহনি, সেই আগের তন্ময়। শুধু আগের মত নেই পল্লবী!
সন্ধ্যা নামছে। ফিরতে হবে। ফোনে অনেকক্ষণ থেকে রিং হচ্ছে। রিসিভ করা দরকার।
"হ্যালো!"
"আম্মু, তোমার আসতে দেরী হচ্ছে কেন?"
"আসছি বাবা, একটু বইমেলায় এসেছিলাম।"
😭😭😭 |
THANKS..... 👍👍👍
No comments